প্রিয় পাঠক আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আরও একটি নতুন আলোচনায়। ইসলামী শরিয়া প্রতিটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমাদের সমাধান দিয়েছে। ইসলাম কখনোই এলেম অর্জন এর বিষয়ে লজ্জা অনুভব করেনি।
হযরত খুযাইমা ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবমন্ডলী! আল্লাহ তায়ালা সত্য কথা( প্রকাশের) ব্যাপারে লজ্জা করেন না। তোমরা স্ত্রীলোকের পশ্চাদ্দারে সঙ্গম করো না।( ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১৯২৪)
রাসূল (সাঃ) এর কাছেও সাহাবে কেরামগণ এই বিষয়টি প্রশ্ন করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম জবাবে বলেছিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। তখন সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে…? তখন তিনি বললেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করবে কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়। তখন সাহাবী আবারো বললেন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কেউ যদি একেবারেই একাকী নির্জনে থাকে…? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বললেন, মানুষ অপেক্ষা লজ্জার ব্যাপারই আল্লাহই বেশী হকদার যে তাকে লজ্জা করা হবে। (মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ৩১১৭)
স্বামী স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখার ব্যাপারে যেসব বক্তব্য পাওয়া যায়। তাহলোঃ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর থেকে তা( লজ্জাস্হান) কখনো দেখিনি এবং তিনিও আমার থেকে তা কখনো তা দেখেননি। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১/৩৩৭)
আর একটি হাদীসে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে, তখন তারা যেন আবৃত থাকে, গাধা যুগলেট মতো যেনো একেবারে নগ্ন হয়ে না যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১/৬১৯,১৯২১)
উক্ত দুই হাদিস থেকে এটি স্পষ্ট প্রমাণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরূপ কখনো করেননি এবং আমাদেরকেও করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। তবে কিছু কিছু ফকীহগণের মত দিয়েছেন যে, স্বামী-স্ত্রী উত্তেজনা বাড়াতে লজ্জাস্থান দেখা বা স্পর্শ করা জায়েজ আছে। (ফাতাওয়া শামি ৫/২৩৪)
আবার অনেকের মতে লজ্জাস্থান দেখার ফলে যদি স্বামী-স্ত্রীর উত্তেজনা বাড়ে সেক্ষেত্রে তা নাজায়েজ বলা যাবে না। অর্থাৎ এটি জায়েজ হলেও অনুত্তম কাজ। এর ফলেই অনেক দেখার সাথে সাথেই লেহন করা বা সাক করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এরফলে কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমনঃ
১. লজ্জাস্থান Suck করার ফলে, লজ্জাস্থান থেকে নির্গত নাপাক( বীর্য মযি ইত্যাদি) জিহ্বা, মুখে ইত্যাদিতে লাগবে। আর জরুরত ছাড়া নাপাকে স্পর্শ করাকে ফকিহগণ বৈধ মনে করেন না। আর নাপাক চুষে ফেলা বা পান করাকে তো বৈধ বলার কোন প্রশ্নই আসে না।
২. মানুষের দেহের সবচেয়ে সম্মানিত অঙ্গ হল তার চেহারা। আর লজ্জাস্থান হলো নাপাকির জায়গা। সুতরাং সম্মানিত জায়গাকে নাপাকের জায়গায় স্পর্শ করানো অবশ্যই নিন্দনীয়।
৩. মুখের দ্বারা আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করা হয়, জিকির করা হয়, তাই এই মুখে নাপাকি লাগানো এবং নাপাকি স্হান Suck করা বড় গর্হিত কাজ।
৪. মুখের অনেক জীবাণু লজ্জাস্থানে রোগ সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া লজ্জাস্থানের জীবাণু মুখে এবং মুখের ভায়া হয়ে দেহের ভিতরে রোগ সংক্রমণ করার আশঙ্কা থাকে। আবার দুর্ঘটনাবশত ধারালো দাঁতও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৫. লজ্জাস্থানে থাকা জীবাণু যেমন মুখের ক্ষতি করতে পারে, তেমনি চোখের জন্যও এটি ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি বিনা প্রয়োজনে নিজে নিজের লজ্জাস্থান দেখা অনুত্তম কাজ। কারণ এর ফলে কোন অবিবাহিত যুবক যুবতী অথবা যাদের স্বামী স্ত্রী কাছে নেই তাদের মধ্যে হস্ত মৈথুনের লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর হস্তমৈথুনের ফলে আমাদের মাথা ব্যাথা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, ব্রেন শক্তি কমে যাওয়া, চোখের জ্যোতি নষ্ট হওয়া সহ ইত্যাদি অনেক ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তার নিজের চারিত্রিক উন্নতির জন্য হস্তমৈথুন করা বা নীল সিনেমা দেখা কিংবা নিষ্প প্রয়োজনে নিজের লজ্জাস্থান দেখা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৬. তাছাড়া অনেকে বলেন লজ্জাস্থান দেখার ফলে চোখের জ্যোতি কমে যায়, যার অর্থ অনেকেইনএমন করেন যে, নীল সিনেমা কিংবা স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখার ফলে দুর্বল চরিত্রের লোকদের মনে উল্টাপাল্টা চিন্তা আসতে পারে। যেমনঃ রাস্তাঘাটে বা কর্মস্থলে কোন মহিলাকে দেখলে তাঁর মনে লজ্জাস্হানের সেই চিত্র কল্পনা শুরু হতে পারে, এমনকি নামাজে দাঁড়ালে ও চিত্র চোখে ভাসতে পারে।
যার ফলে নামাজে অমনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এর কারণেই প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে অন্তরের গুনাহ হয়ে যেতে পারে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে যেহেতু লজ্জাস্থান লেহন করার মাধ্যমে রোগ জীবাণু সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত ভাবে প্রমানিত, সেখানে চুমু দেওয়াকেও বৈধ বলার কোনো অবকাশ নেই। আমরা সংক্ষিপ্তসারে এতক্ষণ যতটুকু বুঝলাম, তাতে আমাদের সামনে প্রতীয়মান হয়েছে,
মেডিকেল সাইন্সের অনেক বিশেষজ্ঞের কাছেই এটির মাধ্যমে রোগ জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি সংশয় ছাড়াই প্রমাণিত। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে লজ্জাস্থান দেখা বা চোষন করা বা চুমু দেওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। তবে উত্তেজনার কারণে কেউ দেখে ফেললে গুনাহগার হবে না। (আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে ভালো জানেন)
0 মন্তব্যসমূহ